Header Ads

Header ADS

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পাহাড়ের চূড়ায় নির্মাণ করা হয়েছে একটি

উলেস্নখযোগ্য স্থান বা স্থাপনাঃক) বাংলাদেশ চা গবেষনা ইনস্টিটিউট।খ) বাংলাদেশ চা বোর্ড প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিট।গ) ৪০ টি চা বাগান।ঘ) লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান (আংশিক)।ঙ) নির্মাই শিববাড়ী।চ) বিভিন্ন খাসিয়া পুঞ্জি।ছ) হাইল হাওরে বাইক্কা বিল অভয়াশ্রম।জ) সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা।ঝ) কাছারী বাড়ী। (সহকারী কমিশনার ভূমির কার্যালয় সংলগ্ন)ঞ) মসজিদুল আউলিয়াবর্ণনা যতোদূর চোখ যায় মসৃণ সবুজে ছাওয়া উচুঁ-নিচু টিলা , উপরে বিসত্মৃত নীলাভ আকাশ । এদিক ওদিক তাকালেই চোখে পড়ে সবুজ বনাণী আর বর্ণিল সব পাখি । চা বাগান , লেক, হাওর, উঁচু নিচু পাহার, ঘন জঙ্গল, খনিজ গ্যাসকূপ আর আনারস, লেবু, পান, আগর ও রাবার বাগান দিয়ে সাজানো অদ্ভুত সুন্দর এই স্থানটির নাম শ্রীমঙ্গল। শুধু তাই নয় বাংলাশের সবচেয়ে বেশি শীত প্রধান অঞ্চল, সবচেয়ে বৃষ্টি প্রধান অঞ্চল হিসেবেও শ্রীমঙ্গল। বৃষ্টিতে ভিজতে কিংবা কন কনে শীত অনুভব করতে আপনি দুটি মৌসুমেই শ্রীমঙ্গল বেড়াতে আসতে পারেন। অবশ্যই আগে এই নাম শুনেছেন, কেউ কেউ হয়তো এসেও ছিলেন আর যারা অসেননি শ্রীমঙ্গল সম্পর্কে তারা ধারণা রাখেন এটি অসাধারণ একটি জায়াগা । আপনার ধারণা ভুল নয় । শ্রীমঙ্গল আপনার মনের মতোই সুন্দর । হয়তো তারও বেশি, যার রূপুরস সবুজ ঘেরা যৌবন যুগে যুগে বহু কবিু সাহিত্যিকদের মুগ্ধ করেছে । আর দেরি নয় , হাতে সময় পেলেই চলে আসুন নির্সগ ভূবন শ্রীমঙ্গলে । রাজধনী ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে বাস কিংবা ট্রেনে চলে আসুন মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে । এখানে এসে হোটেল রেষ্ট হাউজ কিংবা আত্মীয়ের বাড়ীতে হাতমুখ ধোয়ে খাঁনিকক্ষন বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন ‘শ্রী’ সমৃদ্ধ শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্যে, কোন দিকে যাবেন আর কোন দিকে যাবেন না সে সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই কঠিন হয়ে পড়বে,কারন । দরকার নেই এতো ভাবনার । একটি রিকশা , মিশুক কিংবা প্রাইভেট কার নিয়ে প্রবেশ করুন চা বাগানের ভিতর , শহর থেকে রিকশায় মাত্র ৩ মিনিটের পথ । চা বাগানের প্রবেশ করা মাত্রই মনে হবে সত্যি এ যেন এক ভিন্ন পরিবেশ । চারপাশে কেবল সবুজের মেলা মাইলের পর মাইল কেবল সবুজ আর সবুজ , কাটিং করা চা গাছগুলো এতো শৃঙ্খলভাবে বসে আছে কখনো মনে হয় , সাগারের ঢেউ আর কখনো মনে হয় বিশাল কোনো সবুজ মাঠ । মনে হবে কোনো দক্ষ শিল্প যেন মনের মাধুরী মিশিয়ে স্তরে স্তরে সবুজকে সাজিয়ে রেখেছে । চা গাছের ফাঁকে ফাঁকে একটি বিশেষ দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে হাজার হাজার ছায়া তরু , যার ডালপালা , শাখা-প্রশাখায় শুনতে পাবেন রঙবেরঙের পাখির কলকাকলি , শহরের কল- কারখানা, গাড়ির শব্দ ব্যস্ততায় কোলাহল অভ্যস্তদের কাছে এটিকে বর্ণাতীত শ্রুতিমধুর লাগবে । একবারো আপনার মনে আসবে না আপনি ব্যস্ত সভ্যতার মানুষ । কানাডিয়ান ফ্রিল্যান্স লেখক এন্টনি আর ডেল্টন শ্রীমঙ্গলে সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে একে এক খন্ড স্বর্গ বলে (স্বর্গের কাছাকাছি ) আখ্যায়িত করেছেন । চা বাগান বাংলাদেশে মোট ৭টা টি ভ্যালী রয়েছে এর মধ্যে সিলেট বিভাগে রয়েছে ৬টি । এই ৬ ভ্যালীতে মোট চাবাগানের সংখ্যা ১৩৮ টি। শুধু শ্রীমঙ্গলে রয়েছে ৩৮ টি চাবাগান এবং শ্রীমঙ্গলের পাশবর্তী এলাকা সহ চাবাগানের সংখ্যা হচ্ছে ৬০ টি। এ জন্য শ্রীমঙ্গলকে চায়ের রাজধানীও বলা হয় এতো চা বাগান আপনি কোন বাগান দেখতে যাবেন সিন্ধান্ত নিতে কষ্ট হবে । দরকার নেই এতো কিছুর আপনি শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওর ছাড়া যে কোন একটি স্পট নির্ধারন করে রওযানা দিলেই পেয়ে যাবেন চা বগান। কারন শ্রীমঙ্গলের পূর্ব পাশে কিছু অংশ ব্যাপী হাওর ছাড়া পুরুটা উপজেলাই চা বগান দ্বারা আবৃত। আপনি যখন মাইলের পর মাইল চা বাগানের ভিতর দিয়ে চলবেন তখন আপনার মনে হবে বিশ্বের সকল সুন্দর্যরস্মী যেন আপনার সন্মুখে।বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র( বিটিআরআই)পাকিস্তান চা বোর্ড, ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানে একটি চা গবেষণা ষ্টেশন প্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার ষ্টেশনটিকে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করে।ভারতের আসামের পরেই উপমহাদেশের সবচেয়ে পুরাতন চা গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে শ্রীমঙ্গলে। যা দেখতে প্রচুর পর্যটক আসে।বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটটি বাংলাদেশ ন্যাশনাল এগ্রিকালচার্যােল রিসার্চ সিস্টেম (নার্স)-এর অন্তর্ভূক্ত ১০টি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। এ প্রতিষ্ঠানের সারাদেশে ৪টি উপকেন্দ্র রয়েছে। উপকেন্দ্রগুলোর
১টি মৌলভীবাজার জেলার কালিটিতে,
১টি সিলেট শহরে,
১টি চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়িতে এবং সর্বশেষ ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত
১টি উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়ায় অবস্থিত।
বিটিআরআই-এর ৮টি গবেষণা বিভাগ রয়েছে। গবেষণা বিভাগগুলো হচ্ছেঃ- ১. মৃত্তিকা রসায়ন, ২. উদ্ভিদ বিজ্ঞান, ৩. কৃষিতত্ত্ব, ৪. কীটতত্ত্ব, ৫. উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব, ৬. প্রাণ রসায়ন, ৭. প্রকৌশল, ৮. পরিসংখ্যান ও অর্থনীতি। এ প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের অন্যান্য চা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সমতুল্য।বিটিআরআই-এর চা বিজ্ঞানীদের উদ্‌ভাবিত প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা-জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা চা শিল্পের অগ্রগতি ও উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছে। চা বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত বিটি-১ থেকে বিটি-১৬ পর্যন্ত ১৬টি উচ্চ ফলনশীল ও আকর্ষনীয় গুণগতমান সম্পন্ন ক্লোন উদ্‌ভাবন করেছেন। চা বিজ্ঞানীরা সর্বশেষ অধিক ফলনশীল উন্নতজাতের ক্লোন 'বিটি-১৬' আনুষ্ঠানিকভাবে বিমুক্ত করেছেন। এছাড়া চা বিজ্ঞানীরা নিরলস গবেষণা চালিয়ে উদ্ভাবন করেছেন কয়েকটি জেনারেটিভ ক্লোন সমন্বয়ে ৪টি বাইক্লোনাল বীজজাত বিটিএস-১, বিটিএস-২, বিটিএস-৩, বিটিএস-৪সহ একটি পার্লক্লোনাল বীজজাত।সিলেট অঞ্চলের বিখ্যাত সাতকড়া আচার কিংবা মাছ-মাংসের সঙ্গে এ অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয়। সুস্বাদু এ লেবুজাতীয় ফল দিয়ে এবার তৈরি হচ্ছে চা। এরইমধ্যে গবেষকরা সিলেটের এ জনপ্রিয় ফলকে দেশব্যাপী জনপ্রিয় করে তুলতে তৈরি করেছেন ‘সাতকড়া চা’। চায়ের রং হবে অনেকটা কমলা। চা পাতার সঙ্গে সাতকড়ার সংমিশ্রণে তৈরি এ চা। বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) শ্রীমঙ্গলের জেনারেল ম্যানেজার খোন্দকার শাহজাহান নিজেই উদ্ভাবন করেছেন নতুন এ চা। তিনি সাতকড়ার চা ছাড়াও ‘সিলভার চা’ তৈরি করেছেন। তিনি বলেন,সাতকড়া বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের জনপ্রিয় লেবুজাতীয় ফল। মানুষের জনপ্রিয়তার কথা চিন্তা করে এ ফল থেকে চা তৈরির জন্য তিনমাস যাবত চেষ্টা করে সফল হয়েছি।সাতকড়া চায়ের লেভেলও তৈরি হয়ে গেছে। এর ব্র্যান্ডিং নাম হবে সাতকড়া চা, বাংলাদেশের চা। এরই মধ্যে তিনি সিলভার চা ছাড়াও অর্থডক্স (আদি চা) তৈরি করেছেন। যে চা অর্ধশত বছর আগে তৈরি করা হতো। এ চায়ের বৈশিষ্ট্য হল- লিকার হালকা, ফ্লেভার বেশি। এছাড়াও ডায়বেটিক চা তৈরিরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।বাংলাদেশের চা গবেষণা কেন্দ্রটি পড়েছে শ্রীমঙ্গলের মূল শহর থেকে মাত্র ২ কিলো দূরে । কিন্তু শ্রীমঙ্গল পৌরসভার অন্তর্ভূক্ত । সংস্থাটিকে সংক্ষেপে সবাই বিটিআরআই বলে জানেন। শহর থেকে ১০ থেখে ১৫ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে সহজেই বিটিআরআই পৌছে যেতে পারেন । বিটিআরআই ক্যাম্পাসেই রয়েছে বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন অফিস । অফিস গেটে রিকশা থেকে নামামাত্রই চোখে পড়বে হরেক রকম ফুলের সমাহারে ভরা ২টি ফুল বাগান , একটি বিটিআরআইু এর অপরটি চা বোর্ডের। গেটে অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করুন , ভিতরে দেখতে পাবেন ৫০/৬০ বছরের পুরোনো চা গাছ । চা ম্যানুফকচারিংসহ টি টেস্টিং ল্যাব , গবেষণা ফ্যাক্টরিসহ বাংলাদেশর একমাত্র ভেষজ উদ্ভিদের বাগান। রমেশ রাম গৌঢ় এর ৫ কালারের চাবেড়ানো শেষে শরীর ক্লান্তি আসলে চলে যেতে পারেন বিটিআরআই সংলগ্ন রামনগরে চা শ্রমিক রমেশে রাম গৌড় এর আবিষ্কৃত পাঁচ রঙ্গা চা- এর দোকান নীলকন্ঠ চা কেবিনে। রমেশ রাম গৌঢ়ের নীলকন্ঠ চা কেবিনে একই পাত্রে পাঁচরঙ্গা চা ছাড়াও আরো বেশ কয়েক রকমের চা পাওয়া যায় এক কাপ চা পান করলে দেখবেন আপনার শরীরে ক্লান্তি সরে গিয়ে অনেকটা সতেজতা ফিরে এসেছে । রমেশ রাম গৌঢ় ইতি মধ্যে তার গবেষনা চালিয়ে একই পাত্রে ৮রঙ্গা চা আবিস্কারের কৌশল আয়ত্ব করেছেন। বিশ্বের আর কোথাও এ পযন্ত একই পাত্রে ৭রঙ্গা চা আবিস্কারের খবর পাওয়া য়ায়নি। চা খাওয়া শেষ হলে যদি সময় থাকে রমেশ রাম গৌঢ় এর সাথে কথা বলে আসতে পারেন। ইতি মধ্যে রমেশকে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকরা লক্ষাধিক টাকা মাসিক বেতনে চাকুরী করার অপার দিলেও রমেশ নিজের দেশের আবিস্কার বাহিরে নিয়ে যাবেন না বলে সকলের অফার ফিরিয়েদেন। আসার সময় রমেশের মন্তব্য খাতায় আপনার অভিমত ব্যাক্ত করে আসতে পারেন।শ্যামলী পর্যটনভ্রমণ পিপাসুদের কথা ভেবেই লাউয়াছড়া ফরেষ্ট জোনের শ্যামলীতে নির্মাণ করা হয়েছে একটি পিকনিক স্পট। সবুজের অপরূপ সাজে সজ্জিত শ্যামলী। প্রকৃতিপ্রেমিক , ভ্রমণ বিলাসী ও সৌন্দর্য পিপাসুদের জন্য একটি দর্শনীয় স্থান এটি । এর বাস্তাবতা মেলে রাস্তায় দু’পাশে সারিবদ্ধ গাড়ির বহর দেখে । দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা গাড়িতে বিভিন্ন ধরণের ও রঙের ব্যানার ঝুলানো থাকে , কেউ বা ব্যানারে লিখেন ‘শ্যামলীতে আনন্দ ভ্রমণ’ বা ‘শিক্ষাসফর ’। আবার কেউ বা লিখেন ‘বনভোজনে আমরা ‘ক’জন’। দিন দিন মানুষের ব্যস্ততা বাড়ছে, কাজের চাপে যান্ত্রিক মানুষগুলো একঘেঁমেমির মধ্যে ডুবে যাচ্ছে । তাই একঘেঁয়েমি থেকে মুক্তি পেতেই তারা ছুটে আসেন শান্ত , অনাবিল সবুজ প্রাকৃতির কাছে । আর মানুষের এসব চাহিদা মেটাতেই বুঝি চির সবুজের সাজে সেজেছে শ্যামলী । পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে শ্যামলীর সুনাম ছড়িয়ে আছে সারাদেশে।এখানে রয়েছে নানা প্রকার বৃক্ষরাজি । দেশের আর কোথাও একই সাথে এত বৈচিত্র্যময় বৃক্ষ দেখা যায় না । শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ভানুগাছ সড়ক ধরে ৭ কি.মি.দূরে শ্যামলীর অবস্থান । শ্রীমঙ্গল থেকে শ্যামলীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার পর পরই প্রথমে চোখে পড়বে রাস্তার দু’পাশে দৃষ্টিজুড়ে চায়ের বাগান । বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের রাস্তা পেরিয়ে চোখে পড়বে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে থাকা বৃক্ষগুলো । হ্যাঁ , এগুলোই রাবার গাছ । এরপর পরই সহজেই চোখে পড়বে কাশফুলের সাদা পাহাড় । নীল আকাশের নিচে সবুজের গালিচা, তারই একপাশে শরতের বাতাসে দোল আনমনে খেয়ে যাচ্ছে কোমল কাশফুলগুলো । এমন মনোরম দৃশ্যে চোখ জুড়িয়ে যায় । তবে দৃষ্টিনন্দন ও মনোহারী এই প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করতে হলে অবশ্য শরতকাল আসলে ভাল হয় । এরপর সামনে এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে রাস্তার দু’পাশে লম্বা লম্বা গাছগুলো গায়ে বনলতাগুলো যেন অতি নিবিড়ভাবে আদরে জড়িয়ে আছে । ছোট ছোট কয়েকটি পাহাড় আর কিছুক্ষণ পর দেখতে পাবেন সূর্য যেন আপনাকে দেখে লজ্জায় লুকিয়ে যাচ্ছে গায়ের ফাঁকে । যতই এগুতে থাকবেন সূর্য ততই লুকাতে থাকবে । এ যেন এক লুকোচুরি খেলা । একসময় আপনার শরীরে শীতল বাতাসের স্পর্শ পাবেন । আর এখানে একটু দাঁড়ালেই আপনি শুনতে পাবেন জঙ্গলের ভেতর থেকে ভেসে আসছে এক ধরনের পোকার সুরেলা ডাক । এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে চারিদিকে দেখতে পাবেন শুধু সবুজ আর সবুজ । যেন আপনি সবুজ ঢুকে আছেন । আর এটাই হলো শ্যামলী । সৃষ্টিকর্তা যেন বহু যত্নে তৈরি করেছেন এই সবুজ শ্যামলী । এর ডান পাশেই পাহাড়ের উপর রয়েছে গোলাকার টিন শেড । এখানে আপনি বসে বিশ্রাম বা গল্প করতে পারেন । পারেন আপনার খাবার কাজটিও সারতে। শ্যামলীর ডিপ ফিজাপ এরিয়াশ্যামলী কিংবা লাউয়াছড়া বেড়াতে এসে শ্যামলীর ডিপ ফিজাপ এরিয়ার অনুভূতি না নিয়ে গেলে আপনার শ্রীমঙ্গল ভ্রমনের অতৃপ্তি থেকে যাবে। দিনে যতই গরম পরুক না কেন শ্যামলীর ডিপ ফিজাপ এরিয়ায় আপনি পৌছা মাত্রই আপনার শীত অনভিূত হবে। এ জায়গাটি পড়েছে শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ পাকা সড়কের শ্যামলী সেডের উভয় পাশে আধা কিলো পযর্ন্ত। আপনি যখন গাড়ি নিয়ে লাউয়াছড়া যাবেন তখন ঘন জঙ্গলের একটু ভিতরে প্রবেশ করলেই শুরু হবে ডিপ ফিজাপ এরিয়া । তবে পুরু লাউয়াছড়া এরিয়াই তাপ মাত্রা খুব কম। শ্যামলীর উভয় পাশে আধা কিলো এলাকায় তাপ মাত্রা খুব কম থাকে বিধায় এ অংশকে শ্যামলীর ডিপ ফিজাপ এরিয়া বলা হয়। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানচা বাগান দেখা শেষ হয়ে গেলে আপনি চলে যেতে পারেন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে যেখানে উঁচুুনিচু পাহাড়ের গায়ে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে হাজার হাজার প্রজাপতির লাখ লাখ বৃক্ষ । ন্যাশনাল পার্কে প্রবেশ করা মাত্রই আপনি দেখবেন চারিদিকে হাল্কা অন্ধকার রাস্তায় দুপাশের বৃক্ষগুলো দিবাকরের আলোক রশ্মিকে আটকে রেখেছে , মাঝে মাঝে বৃক্ষসারির মগডালে চোখ রাখুন দেখবেন বানর আর হনুমান লাফালাফি করছে । এতটু ভেতরে প্রবেশ করলে আপনার চোখে পড়বে খাটাস , বনমোরগ , উল্লুক , মেছোবাঘ বন বিড়ালসহ বিভিন্ন জীবজন্তু আর পার্কের বিশাল বিশাল বৃক্ষরাজি,জীবজন্তুর হুঙ্কার, ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ, বানরের লাফালাফি, ঝাঁকঝাঁক উল্লুকের ডাকাডাকি একটু সময়ের জন্য হলেও আপনার ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করে মনে এনে দেবে প্রশান্তির ছোঁয়া । এমনিতে দিনদিন বাংলাদেশের মানুষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সীমিত হয়ে পড়ছে দেশের স্থল ভূমি আর তার সঙ্গে ধ্বংশ হচ্ছে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ।এদিকে মানুষের জীবন যাত্রা ক্রমশ হয়ে উঠছে নগরকেন্দ্রিক। কিন্তু যে হারে প্রকৃতি ধ্বংশ হচ্ছে তার চেয়ে দ্বিগুণ হারে মানুষের চাহিদা বাড়ছে অরণ্যের দূষন মুক্ত অক্সিজেন গ্রহনের জন্য। প্রতিদিন ধ্বংশ হচ্ছে আমাদের শস্যশ্যামল বাংলার প্রকৃতি। বৃদ্ধি পাচ্ছে শহরের ব্যস্ত জীবন কিন্তু শহরের ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে এখনও মানুষ পেতে চায় শ্যামল অভয়ারণ্যের ছোঁয়া কিংবা একটু নিস্ত ব্ধতার একাকিত্ব। আপনার এই চাহিদা পূরণ করতে দেশের পূর্বাঞ্চলের একমাত্র বন গবেষণা কেন্দ্র ‘লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে বেড়ানো যতার্থ হবে।প্রায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর এলাকাজুড়ে লাউয়াছড়া পার্কের ভেতর আড়াই হাজারেরও অধিক প্রজাতির পাখি যার মধ্যে একাধিক প্রাণীর অস্থিত্ব দেশের অনান্য বনে প্রায় বিলুপ্ত। এছাড়াও ১০ প্রজাতির সরিসৃপ, বাঘ,ভাল্লুক, হরিণ, বানর, সিভিট কেটসহ অর্ধশত প্রজাতির জীবজন্তু রয়েছে। এর ভিতরে রয়েছে কয়েকটি খাসিয়া পুঞ্জি, পার্কের পাহাড় বিস্তৃত লম্বা বৃক্ষে খাসিয়ারা খাসিয়া পানের চাষ করে। পার্কের এক পাশে রয়েছে আনারসের বাগান, এক পাশে চায়ের বাগান আবার কোথায় রয়েছে লেবুর বাগান। জঙ্গলের ভিতর রয়েছে কয়েকটি পাহাড়ি ছড়া। পুরো ন্যাশনাল পার্কটি শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ পাকা মহাসড়ক ও সিলেট আখাউড়া রেলওয়ে সেকশনের রেললাইন দ্বারা ৩ খন্ডে বিভক্ত। কিন্তু রেললাইন ও পাকা সড়ক দ্বারা বিভক্ত হলে ও পার্কের ভিতর তেমন কোনো বাড়ি-ঘর না থাকায় ও ঘন জঙ্গলের কারণে একাকিত্বের তেমন কোনো সমস্যা হয় না। লাউয়াছড়ায় এক ধরেণের পোকা রয়েছে, যার শব্দ শোনার পর আপনার আচমকাই বা হঠাৎ করেই যেন আপনার ভালো লাগতে শুরু করবে। মনে হবে যেন আপনি অন্য কোনো পৃথিবীতে পা দিয়েছেন।ভর দুপুরে কিংবা সকাল বেলা লাউয়াছড়ার প্রাকৃতিক শব্দ শুনে মনে হবে আপনি নিশি রাতে কোন নিস্তব্দ স্থানে দাড়িয়ে আছেন। এই পোকার শব্দকে ‘ফরেস্ট মিউজিক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন পার্কের ট্যুরিস্টর। লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে ছিল বিরল প্রজাতির এক বৃক্ষ। সেই বৃক্ষটিকে নিয়ে নানা জনের ছিল নানা কৌতুহল। এক সময় এই বৃক্ষের গায়ে লেখা ছিল ‘ক্লোরোফম’। দীর্ঘদিন এই নাম থাকায় দেশবাসী এটিকে ‘ক্লোরোফম’ বলেই জানেন। হঠাৎ করে এ গা থেকেক্লোরোফম সাইড বোর্ডটি নামিয়ে এর গায়ে টাঙ্গানো হয় ‘ আফ্রিকান অক ট্রি ’ এর পর এই নেম প্লেটটিও নামিয়ে লেখা হয় ‘ একটি বিরল প্রজাতির বৃক্ষ’ লোকমুখে প্রচারিত রয়েছে এই বৃক্ষটি কোটি টাকা মূল্যের। এটি নাকি একবার বিমান আটকিয়েছিল। এর পাতার গন্ধ শুনলে নাকি মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেতো। তবে বন বিভাগের কাছ থেকে এরকম কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। একটি সূত্রে জানা যায়, এ প্রজাতির বৃক্ষ বিরল। বাংলাদেশে এ প্রজাতির গাছ আর কোথাও নেই। যাহোক নানাভাবে এর খবর ছড়িয়ে পড়ায় মানুষ এই বিরল প্রজাতির বৃক্ষটিকে প্রধান উদ্দেশ্যকরে লাউয়াছড়া যায়। বৃক্ষটি পার্কের ফরেস্ট রেস্ট হাউজের পাশে অবস্থিত। তবে দুঃখ জনক হলেও সত্য গত বছরের জুলাই মাসের প্রথম সাপ্তাহে এক ঝড়ে গাছটি উপরে পরে যায়। বর্তমানে গাছটির মুল থেকে ৫ফুট অংশ স্ব স্থানে পুঁতে রেখে চারপাশে কাঁটা তারের বেড়া ঘিরে রাখা হয়েছে এবং বাকী অংশ পাশে স্ত্তপাকারে রাখাহয়েছে।যাকে ঘিরে এখনও পর্যটকদের ভীর জমে। তবে লাউয়াছড়ার প্রাণ বৃক্ষ দেশের একমাত্র আবিস্কৃত এই বৃক্ষটি যখন ঝড়ে উপরে পড়ে তখন বন বিভাগ জানতে পারে এটি ক্লোফোরা এক্সেলসা এবং সৌভাগ্য বশত ক্ষুদ লাউয়াছড়ায়ই আবিস্কার হয় আরও একটি ক্লোফোরা এক্সেলসা। এর অবস্থান লাউয়াছড়া বিট অফিসের পাশে। কোথায় লাউয়াছড়ার অবস্থান ঢাকা,সিলেট থেকে বাস কিংবা ট্রেনযোগে শ্রীমঙ্গলে পৌঁছাবেন। শ্রীমঙ্গল থেকে ভানুগাছ-কমলগঞ্জ রাস্তাটায় ৭ কিলোমিটার এগুলেই লাউয়াছড়া পার্কের সীমানা। এটি শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার মধ্যে পড়েছে। তবে বেশিভাগই অংশ পড়েছে কমলগঞ্জ উপজেলায়। শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ রোড থেকে বাসে জনপ্রতি ১০ টাকা, প্রাইভেট কার নিয়ে গেলে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, মিশুক নিয়ে গেলে ২০০ থেকে৪০০ টাকায় ঘুরে আসতে পারেন।

রাবার বাগানশ্রীমঙ্গলে রয়েছে বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের সিলেট বিভাগী অফিস । এ আফিসের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে সরকারী ৪টি রাবার বাগান। এ ছাড়াও প্রায় প্রত্যেক বেসরকারী বাগানেও এখন রাবার চাষ করা হচ্ছে। আপনি ইচ্ছে করলে যে কোন একটি রাবার বাগান ঘুরে দেখতে পারেন এবং জানতে পারেন কিভাবে রাবার তৈরী হয়, জানতে পারেন রাবার শমিকের জীবন। আপনি যখন হাজার হাজার রাবার গাছের মধ্য দিয়ে হাঁবেন তখন আপনি দেখবেন গাছের ডালপালা পুরু আকাশটাকে ঢেকে রেখেছে। বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের বাগানের মধ্যে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে রয়েছে শাহজী বাজার রাবার বাগান, বাহুবল রয়েছে রুপাইছড়া রাবার বাগান, এবং মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁও রাবার বাগান এবং কুলাউরায় রয়েছে ভাটরার রাবার বাগান। আপনি এর যে কোন একটি বাগান ঘুরে ধেখতে পারেন। এ ৪টি বাগানে মোট ৮ হাজার ৮৩ একর জমিতে রাবার চাষ করা হয়। চার বাগানে সর্ব মোট গাছ রয়েছে উচ্চফলশীল ৬লাখ ৬৫ হাজার ৮০৯টি এবং কম উৎপাদন শীল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬১টি। অন্যদিকে এ ৪ টি বাগানে কষ সংগ্রহের জন্য ৩ শ্রেণীর শ্রমিক রয়েছে। ১ হাজার ১২৭ জন। ৩ শ্রেণীর শ্রমিকদের মধ্যে মাসিক বেতন ৩ হাজার ৫০০ টাকা বেতনে সরকারি শ্রমিক রয়েছেন ৬১৬ জন যারা প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ কেজি কষ আহরণ করে। উৎপাদনভিত্তিক ২৬৫ জন শ্রমিক প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ কেজি কষ আহরণ করেন কেজিপ্রতি আড়াই/তিন টাকা হারে।

আনারস বাগান
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ করতেই চোখ পড়বে আনারসের বাগান , আনারস গাছগুলো নিচ থেকে টিলার উপবে এমন ভাবে গিয়ে উঠেছে দূর থেকে মনে হবে যেন একদল পিপিলিকা (ডানা মেলে ) সারি বেঁধে উপরে উঠছে । উঠে আসুন একেবারে চূড়ায় যতোটুকু চোখ যায় দেখবেন টিলার পর টিলা শুধু আনারস আর আনারস , ও হ্যাঁ মনে রাখবেন কাউকে না বলে আনারস পাড়বেন না । যদি আনারস নিতে চান তাহলে ওখানেই পাবেন । আনারস বাগানের পরিচর্যাকারীর সঙ্গে একটু বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন দেখবেন সে খুশি হয়েই দুএকটি আনারস আপনার হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে । কিছু বকশিশ ধরিয়ে দিন এদের হাতে কারণ এরা খুব গরিব , হয়তো নিতে চাইবে না তবু চেষ্ট করুন । লেবু বাগান খুব ভোর উঠে শ্রীমঙ্গল বাজারে যদি যান , তাহলে দেখবেন শুধু লেবু আর লেবু । নিজের চোখকেই অবিশ্বাস্য মনে হবে এতো লেবু শ্রীমঙ্গলে জম্মে । শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে শত শত লেবু বাগান । খুব ভোর থেকেই জীপ ও ঠেলা ভর্তি করে লেবু ব্যবসায়ীরা বাগান থেকে লেবু এনে বাজারে জমা করে । শহর থেকে চা বাগান ধরে যেকোন দিকে এগুলেই দেখতে পাবেন ছোট ছোট লেবু বাগান , বাগানের কাছে গেলেই আচমকা লেবুর ঘ্রাণ লাগবে আপনার নাকে । এখানে সাধারনত ৮/১০ প্রকারের লেবু হয়ে থাকে। যাবার সময় কিছু লেবু কিনে নিয়ে যেতে পারেন। কারন দেশের যে কোন জায়গা থেকে শ্রীমঙ্গলে লেবু সস্তা। এছাড়াও শ্রীমঙ্গলের চার পাশে ছড়িয়ে ছিঠিয়ে রয়েছে আগর, নাগা মরিচ, কাঠাল, পেয়ারা, কূল বরই, সাগর কলা ও লিচু সহ বিভিন্ন ফলের বাগান । বনের এসব বাগান গুলো নিজ নিজ বৈশিষ্ট নিয়ে শ্রীমঙ্গলের শ্রীর সাথে একাকার হয়ে আছে। ভাড়াউড়া লেক চারদিকে চা বাগান মাঝখানে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে একটি লেক শাপলা গুলি উকি দিয়ে আপনার আগমনের প্রহর গুনছে। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে কলেজ রোড হয়ে সোজা চলে যান ভাড়াউড়া লেকে । এখানে যেতে সময় লাগবে রিকশায় ১০ মিনিট । দেখবেন শাপলা ফুল পরিপূর্ণ লেকটিতে হরেক রকম পাখির সমাহার । লেকের শাপলা ফুলগুলোর দিকে তাকালে মনে হবে সবুজের মধ্যে লালের ছোঁয়া তবে এ লেকে যেতে হলে পাহাড়ের গা বেয়ে একটু হেঁটে যেতে হবে । হেঁটে চলার পথটি এতোই সুন্দর যে , হাঁটার ক্লান্তি আপনিই ভুলে যাবেন । রাজঘাট লেকএ লেকটি শহর থেকে একটু দূরে পড়েছে । শ্রীমঙ্গল থেকে কালীঘাট কিংবা সিন্দুরখান । ২টি রাস্তা হয়েই সেখানে যাওয়া যায় । মিশুক, টেম্পো বা জিপে করে গেলে ৩০ মিনিট সময় লাগে । বাগানের মধ্যখানেই অবস্থিত এ লেকটির ৩ দিকে চা বাগান ও একদিকে সুইমিংপুল। লেকটিতে ভরে আছে শাপলা আর জলপদ্মে। লেকের পাশে দাঁড়ান দেখবেন অতিথি পাখিরগুলো আপন মনে লেকের পানিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে । এখান থেকে একটু বেলা থাকতেই ফেরা উচিত যদিও ফিরতে মন চাইবে না , কারণ এটি শহর থেকে একটু দূরে পড়েছে । মাগুরছড়া গ্যাসকূপহাতে সময় থাকলে মাগুরছড়া গ্যাসকূপটিও দেখে আসতে পারেন , ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন এই কূপ খননকালে বিস্ফোরন ঘটে। বিস্ফোরণের দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো আপনার চোখে পড়বে আগুনে পোড়া বৃক্ষগুলো । কিছু কিছু বিশেষজ্ঞের মতে , এটি এশিয়ার সর্ববৃহৎ তেল ও গ্যাসের খনি । এ গ্যাস কুপের পাশেই রয়েছে মার্কিন কোম্পানী সেভরনের জেরিন চা বাগানে ও কালাপুরে গ্যাস কুপ অনুমতি নিয়ে আপনি গ্যাস কূপ গুলোও দেখেযেতে পারেন। তাৎক্ষনিক অনুমতি না নিতে পারলেও বাহির থেকেও কূপ গুলো দেখে যেতে পারেন। পান পুঞ্জিশ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে খাসিয়া পানের পুঞ্জি ও বাংলা পানের বরজ। আপনি যখন পাহারের উচুঁ টিলায় খাসিয়া দের পান পুঞ্জি দেখতে যাবেন সেখানে পাবেন অন্যরকম এক অনুভূতি। টিলার পর টিলার সুউচ্চ গাছ গুলো সবুজ পানপাতার জামা পড়ে আছে। মনে হবে এ যেন কোন আজগুবি কান্ড। না এটা কোন আজগুবি কিছুনা এটা আপনি যে খাসিয়া পানের পুঞ্জি দেখতে গেছেন সে খাসিয়া পান। হাত দিয়ে ধরতে পারেন, উঠতে পারেন পানের সাথে ছবি। যদি দু একটা পান পাড়তে চান তো পাশেই রয়েছে খাসিয়াদের গ্রাম সেখানে এসে তাদের অনুমতি নিন। পাশা পাশি ৪/৫ টিলায় খাসিয়ারা এক সাথে বসবাস করে তারা তাকে পুঞ্জি বলে সাধারন্ত আমরা যাকে গ্রাম বলি। আপনি যখন কোন পুঞ্জিতে উঠবেন তখন দেখবেন আপনার জন্য অপেক্ষা করছে আরও একটি অভিজ্ঞতা । কোন পুঞ্জিটিলার একপাশ থেকে আপনি হাঠা শুরু করলে দেখবেন আপনার দু পাশে এতো সচ্ছ ঘর আর সে ঘরের বারান্ধায় বসে মুখে পান চিবে চিবে খাসিয়া মেয়েরা গাছ থেকে পেড়ে আনা পান গুলো ভাজ করছে। পান পুঞ্জি দেখতে হলে আপনার জন্য সহজ হবে লাউয়াছড়ার ভিতরে লাউয়াছড়া পুঞ্জি এবং মাগুর ছড়া গ্যাস কুপের পাশে রয়েছে মাগুর ছড়া পুঞ্জি। মাগুর ছড়া গ্যাস কূপ থেকে আধা কিলোর মতো ভানু গাছের দিকে এগিয়ে বাম দিকে রেল লাইন ক্রস করে জনবসতির টিলাগুলোই হচ্ছে মাগুর ছড়া পুঞ্জি। এখানে রয়েছে তাদের একটি গীর্জা ফেরার পথে এটি দেখে আসতে পারেন। এ ছাড়াও শ্রীমঙ্গল শহর থেকে উত্তর দিকে মির্জাপুর ইউনিয়নে পাহারের পাদদেশে রয়েছে বাংলা পানের বরজ।

ওফিং হিল
চমৎকার একটি জায়গা অফিং হিল , শহর থেকে প্রথমে কালীঘাট চা বাগানে পৌছান । সেখান থেকে হাতের বাম দিকে ইট বিছানো রাস্তায় এগিয়ে যান । চা বাগান আর রাবার বাগানের মাঝ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ২০ মিনিটের মধ্যে পেয়ে যাবেন হুসনাবাদ চা বাগান । ইচ্ছা করলে গাড়িও নিতে পারেন , সেখান থেকে পায়ে হেঁটে আগর বাগানের দিকে এগিয়ে যান আগরের বাগান পেরুলেই দেখতে পাবেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য । মনে হবে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে যেন পৌঁছে গেছেন । আর একটু এগুলেই পাহাড়ের ভিতরে পাবেন একটি লেক । শাপলা , জলপদ্মে ভরা লেকটির এক পাশ থেকে অপর পাশে দেখবেন শত শত পাকৌঁড়ি আর সরালী ভাসছে । লেকটি এঁকে - বেঁকে অনেক দূরে চলে গেছে । একটু দূর বিধায় এ লেকে পর্যটকদের ভীর হয় কম । লেকটির কাছে গেলে মনে হবে এটিকে যেন আপনিই আবিষ্কার করেছেন । এখানে আপনা আপনিই কেটে যাবে বেশ কিছুটা সময় । এবার ডান দিকে রাবার বাগানের নিচ দিয়ে দেখবেন খুব সুন্দর একটা ঢালু রাস্তা চলে গেছে ,মন চাইবে ঐ রাস্তায় যেতে মনকে কষ্ট দেওয়া ঠিক না । ঐ রাস্তা ধরেই এগুতে থাকুন । এক সময দেখবেন আপনি উপর দিকে উঠছেন । কতোটুকু উপরে উঠলেন তা বুঝতে হলে বাম দিকে তাকান ভয়ের কোনো কারণ নেই আপনি প্রসস্ত টিলার রাস্তায় অবস্থান করছেন । সেখানে থেকে দেখবেন অসংখ্য ছোটুবড়ো পাহাড় যেন গভীর নিদ্রায় নিমজ্জিত । আপনার মনে হবে হয়তো আকাশের দিকে উঠে যাচ্ছেন । যতোই উপরে উঠবেন সৌন্দর্য কেবল বাড়তেই থাকবে । উঠে আসুন একেবারে চূড়ান্ত চারিদিকে দুষ্টিনিবদ্ধ করুন , বাইনোকুলার থাকলে লাগিয়ে নিন চোখে দেখবেন হাজার রকমের সৌন্দর্য আপনার দৃষ্টি সীমানায় এসে ভিড় জমাবে । স্থির হয়ে থাকবে আপনার দৃষ্টি । মনে হবে কোনো স্বপ্নপুরী কিংবা জাদুর রাজ্যে আপনি অবস্থান করছেন। অফিং হিলের অর্থ হলো নানা রকমের সৌন্দর্যের সমাহার যা সেখান থেকে অনেক রকমের উপভোগ করা যায়। ভ্রমন শেষে শ্রীমঙ্গলের ভ্রমন এলবামের ছবিগুলো উল্টান । দেখবেন নিমিষেই মন ভালো হয়ে গেছে । চা বাগানের মাঝে কিংবা বিশাল বাংলোর সামনে আপনি দাঁড়িয়ে । মন চাইবে আরেকবার আসতে । হাতে সময় বের করে নিন মনের ইচ্ছা পূরন করতে । বার্নিস টিলার আকাশ ছোয়া সবুজ মেলাবার্নিস টিলা নামটা শুনেই মনের মধ্যে অজানাকে জানার জন্য আচমকা একটা শিহরন দিয়ে উঠবে । আকাশ ছোয়া সবুজ মেলা দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই যেতে হবে বালিশিরা ভ্যালীর বার্নিশ টিলায়। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে কালীঘাট রোড হয়ে জীপে চড়ে অথবা রির্জাভ কার,লাইটেস,মিশুক,সিএনজি কিংবা রিকসা নিয়ে দু পাশে চা বাগানের মধ্য দিয়ে পিস রাস্তা ধরে প্রায় ৫ কিালো এগুলেই পাবেন ফিলনে হাউজ এখানেই দাড়াতে হবে । দেখবেন পিস রাস্তাটি চলে গেছে ডান দিকে , সোজা একটি মাটির রাস্তা চলে গেছে চাবাগানের বুকচিড়ে এবং আপনার কাংকিত বানিশ টিলার রাস্তাটি চলে গেছে পিচ রাস্তা থেকে বামদকে ফিনলে হাউসের পাশ দিয়ে। এরাস্তা ধরে এগুলেই আপনি দেখতে পাবেন ফিলনে রাবার ফেক্টরী মনে রাখবেন এই ফেক্টরীতে একটি টিউবল রয়েছে । বার্নিশ টিলা দেখে ফেরার পথে পানি পিপাসা পেলে এখানেই পিপাসা মিটাতে হবে। ফিলনে রাবার ফেক্টরী ছেড়ে একটু সামনে এগুলেই আবার চা বাগান এ চাবগানের পথ ধরে একটু সামনে গিয়ে ডান দিকে এগুলেই চোখে পড়বে বিশ্ব কবি রবি ঠাকুরের সৌধামনির বুকে সবুজ ডানা মেলে স্থির হয়ে আছে সু উচ্চ টিলারাশি। আস্তে আস্তে যখন আপনি একটি টিলায় উঠে পড়বেন তখন আপিনার বিশ্বাস করতেই কষ্ট হবে আপনি ভূ-পৃষ্টে দাড়িয়ে আছেন। মনে হবে বিমান কিংবা হেলিকপ্টার থেকে শ্রীমঙ্গল দেখছেন। টিলার একপাশে শুধু চাবাগান অন্য পাশে একের পর এক সবুজ ঠিলা । এ টিলার পরেই বালাদেশের সীমানার সমাপ্তাংশে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। শ্রীমঙ্গলের এক মাত্র ঝর্ণা ‘‘যজ্ঞ কুন্ডের ধারা’’ শ্রীমঙ্গলে এসে শুধু সবুজের ছোয়া নিবেন তাতো হয়না একটু পানির ছল ছল শব্দ শোনাওতো দরকার। তাই চলে যান শহরের কাছা কাছি জাগ ছড়া চাবাগানের ১৪ নং সেকশনে যজ্ঞ কুন্ডের ধারায়। সেখানে রয়েছে অপরুপ সুন্দর্য সমৃদ্ধ শ্রীমঙ্গলের একমাত্র ঝর্ণা। যারা এ ঝর্ণাকে প্রথম দেখবেন তারা অবশ্যই বিষ্মিত হবেন। এটিও ঈশ্বরের অপরুপ একটি সৃষ্টি। ঝর্ণাটি দেখতে আপনি শ্রীমঙ্গল শহর থেকে মৌলভীবাজার রোড হয়ে কাকিয়া বাজার নেমে ডান দিকে জাগ ছড়া চাবাগানে যাবেন অথবা শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ভাড়া উড়া চাবাগান হয়ে মেটো রাস্তায় জাগ ছড়া চা বাগানে গিয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করে আপনি চলে যাবেন জাগছড়ার ১৪নং সেকশনে। সেখানে চোখে পড়বে একটি ব্রীজ। ব্রিজের ডান পাশ দিয়ে ছড়ার পাড় ধরে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই শোনতে পাবেন শা শা শব্দ। নেমে পড়বেন পাহারী ছড়ায় দেখবেন কোন যাদুকর মাটিতে অপরুপ কারুকাজ করে পানি প্রবাহের পথ করে দিয়েছেন। এর আদি কাহিনী সুত্রে জানাযায়, শ্রীমঙ্গলের কালাপুরে প্রাচীন চৌতলীতে দেবস্থান নির্মাণ করে অনন্ত নারায়ন দেবতাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল । দেবতা প্রতিষ্ঠা কালে বিরাট যজ্ঞ স্থানকে পরিষ্কার করে যে পয়ঃপ্রণালী সৃষ্টি হয়েছিল সেই স্রোতধারা একটি পাহাড়ী নদীর আকার ধারন করে যা আজও যজ্ঞছড়া বা জগছড়া নামে খ্যাত হয়ে আছে । এই জাগ ছড়ায প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট ঝর্ণার নামকরন করা হয়েছে ‘‘যজ্ঞ কুন্ডের ধারা ’’ নির্মাই শিববাড়ী শ্রীমঙ্গলের ঐতিহŠবাহী নির্মাই শিববাড়ী ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে একটি আকর্ষনীয় স্থান। এখানে শিব মন্দিরের পাশেই রয়েছে ৯একর জায়গা জুড়ে বিশাল একটি দিঘী। দিঘীর চারপাশে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতীর বৃক্ষ সারি। এই দিঘীর পাড়ে বৃক্ষ সারির নিচে বসে আড্ডা কিংবা গল্প করেই আপনি কাটিয়ে দিতে পারেন অনেকটা সময়। নির্মাই শিববাড়ীর আশেপাশের প্রবীন ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে আপনি জেনে নিতে পারেন এই মন্দিরের ইতিহাস। নির্মাই শিববাড়ীর প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে জানা যায়, চতুর্দশ শতাব্দিতে এ অঞ্চল ভারত বর্ষের ত্রিপুরার মহারাজার রাজত্বের অন্তর্ভূক্ত ছিল। কুকি অধিবাসী সম্প্রদায়েরে আবাসস্থল ছিল এই বিস্তৃর্ণ অঞ্চল। কুকি সমান্তরাজা প্রায়ই মহারাজের বিরোদ্ধে বিদোহ ঘোষনা করত। তেমনি এক বিদ্রোহ দমন করতে এসে মহারাজের জামাতা এখানে নিহত হন। তৎকালীন সময়ে ভারতবর্ষে সহমরণ প্রথা থাকলেও মহারাজের কন্যা নির্মাই স্বামী নিহত হওয়ার স্থানে এসে শিবের আরাধনা করতে থাকেন। তার সংগে ছিলেন ছোট বোন উর্মাই। নির্মাই সাধনায় সিদ্ধিলাভ করায় তার নামানুসারে এই শিব মন্দিরের নাম করা হয় নির্মাই শিববাড়ী। সিতেশ দেবের চিড়িয়াখানা ও দেশের একমাত্র সাদা বাঘশ্রীমঙ্গল পৌর শহরের রামকৃষ্ণ মিশন রোডের একটি দ্বিতল বাড়ি । এটিই সিতেশ রঞ্জন দেবের বাসা । রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের পাশেই অবস্থিত এই বাড়িটিতেই সিতেশ বাবু তৈরি করেছেন তার মিনি চিড়িয়াখানাটি । বাসার বামপাশে দিয়ে ছোট একটি টিনের গেটের ভেতর দিয়ে চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করতে হয় । চিড়িয়াখানায় প্রবেশমাত্রই শুরু রাস্তায়ই চোখ পড়বে গুঁইসাপ ! দেখবেন আপনার দিকে তেড়ে আসছে। অবশ্য চমকে ওঠার কোনো কারণ নেই , খাঁচার মধ্যেই রাখা হয়েছে জীবটিকে । কুমির আকৃতির এই গুঁইসাপের বৈশিষ্ট হলো মুখ দিয়ে থুথু ছুড়ে মারা । এরপরই চোখে পড়বে একটি মেছো বাঘ । এক সময় প্রচুর পরিমাণে শ্রীমঙ্গলে দেখা যেতো এই বাঘ । আর একটু এগিয়ে বামে তাকালেই চোখে পড়বে রঙের বর্ণচ্ছ্বটা আর কানে আসবে কিচিরমিচির শব্দ । বিরল প্রজাতির এই পাখিগুলো দেখে যেকেউই বিস্ময়াভূত হবেন । এই পক্ষীকুলের ভেতর থেকে হঠাৎ বাংলা কথা শোনা গেলে অবাক হবেন না , ওটা সিতেশ বাবুর ময়নার ডাক ! সিতেশ দেবের চিড়িয়াখানাটিতে রয়েছে জংলী রাজহাঁস, চখা , সরলী , রাজ সরলী , চা পাখি , ধনেশ , হরিয়াল , সবুজ ঘুঘু , বনমোরগ , ডাহুক , জল কবুতর , নীল গলা বসন্ত বৌরি , তিলা ঘুঘু ও তিতির , ময়না , টিয়া , তোতা , পাহাড়ি বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি । এরপর দেখবেন সোনালি কচ্ছপ । যারা আগে কখনো সোনালি কচ্ছপ দেখেননি , নিঃসন্দেহে তাদের কাছে এই কচ্ছপটি বিস্ময়কর মনে হবে । এই সোনালি কচ্ছপের বৈশিষ্ট্য হলো এটি গাছে চড়তে পারে । সোনালি রঙের এই প্রানিটি ফল খায়, গাছে চড়ে । ছোট্ট এই চিড়িয়াখানার আরেক আকর্ষণ উড়ান্ত কাঠবিড়ালী । নিতান্তই নিরীহ গোছের এই প্রাণীটি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ৩০০ থেকে ৪০০ফুট দূরে ডানা মেলে উড়ে যেতে পারে । উড়ন্ত অবস্থায় এদের শরীরের চমড়া ছড়িয়ে পড়ে ডানার আকৃতি নয়ে । কিন্তু চিড়িয়াখানায় বাঘ থাকবে না তা কি হয় ? অতএব এবার বাঘ দর্শন । তাও আবার যে সে বাঘ নয় , সাদা বাঘ । এই প্রজাতির বাঘ বাংলাদেশে আর কোথাও নেই । পুরু শরীরের দুধের মতো সাদা প্রশমে আবৃত বিরল এ বাঘটি নিমিশেই তার চোখের রং পাল্টাতে পারে বাঘ যখন আপনি দেখবেন আচমকাই বাঘটির জন্য আপনার মায়া হবে । মুখ দিয়ে বাঘটির দিকে একটু ফুঁ দিলেই সাপের মত পুস করে উঠবে আপনার দিকে। চিড়িয়াখানার বাম দিকে রয়েছে মায়া হরিণের দল আদর করতে ইচ্ছে হলে খাঁচার ভিতর হাত বাড়িয়ে দিন । দেখবেন হরিণগুলো এসে তার জিহবা দিয়ে আপন মনে আপনার হাত স্পর্শ করে দিচ্ছে । একটি প্রানী আপনাকে আদর করে দিচ্ছে ভাল নালেগে কি পারে । মায়া হরিণের পরেই রয়েছে ভাল­ুকের খাঁচা এখানে রয়েছে দু’টি ভাল­ুক এদের সারা শরীর কালো গলায় রয়েছে সাদা ভিআকৃতির দাগ জংগলের হিংসপ্রাণী হলেও চিড়িয়াখানায় এ ভাল­ুক দু’টি প্রায়ই খাঁচা থেকে বেড়িয়ে আসে সিতেশ বাবু ও তার ছেলেদের সাথে বাসার ভিতরেই হাঁটা চলা করে কখন হাত ধরে কখন কাধে চড়ে । আবার প্রায় সময় তার কুকুরের সাথে খেলাও করে । চিড়িয়াখানায় এক কোনে রয়েছে অজগরের অবস্থান । এখানে রয়েছে এক জোড়া অজগর ফেরার আগে অবশ্যই অজগর গুলোকে দেখে যাবেন । কারণ এই অজগর গুলো পাঁচ বছর আগে এখানেই ৩৮টি ডিম পেড়েছিল । সে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটেছিল পরবর্তীতে বাচ্চাগুলোকে লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত করা হয় । এরপর পরই রয়েছে পুরু শরীর জোড়া কাঁটা আবৃত সজারু, হিমালয়ান পাম্প সিভিট, রয়েছে সাদা ডুরাকাঁটা সোনালী বাঘ, প্রায় শতাধিক রাজকীয় পায়রা ও লম্বা লেজওয়ালা হনুমান । প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা এবং বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবার জন্য চিড়িয়াখানা উন্মুক্ত থাকে । চিড়িয়াখানায় প্রবেশের জন্য কোন ফির প্রয়োজন নেই । তবে যাওয়ার সময় যদি হাতে সময় থাকে তাহলে কথা বলে যেতে পারেন চিড়িয়াখানার পরিচালক সিতেশ বাবুর সাথে। জানতে পারেন তাঁর দুরদর্শ কিারী জীবনের কাহিনী । লাউয়ছড়ায় ভেষজ উদ্ভিদের বাগান লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কেই রয়েছে দেশের পূর্বাঞ্চলের একমাত্র ভেষজ বাগান আরগ্য কুঞ্জ। মাগুর ছড়া গ্যাস কুপ পেরিয়ে প্রায় আড়াই কিলো এগুলেই হাতের ডান দিকে চোখে পড়বে ভেষজ বাগান আরগ্য কুঞ্জ। পার্কের ২ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এ ভেষজ বাগানে রয়েছে ৭৯ প্রজাতীর ঔষধী গাছ । যার অধিকাংশই আজ বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্তীর পথে। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে গাছগুলো গায়ে কোন নাম না দেয়াতে গাছের পরিচয় জানতে একটু কষ্ট হবে। আপনি আরগ্য কুঞ্জের বিভিন্ন ঔষদি বৃক্ষ দেখে বুঝতে পাবেন বাংলাদেশ এক সময় ভেষজ উদ্ভিদের জন্য কত সমৃদ্ধ ছিল? শতবর্ষের স্মৃতিবিজড়িতশ্রীমঙ্গলের ডিনস্টন সিমেট্রি শতবর্ষের স্মৃতিবিজড়িত সিমেট্রির অবস্থান শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ১৫ কি.মি. দূরে জেমস ফিনলে টি কোম্পানির ডিনস্টন চা বাগানের ভেতরে। সিমেট্রি এলাকাজুড়ে কোথাও কোলাহল নেই,সুনসান-নিথর নীরবতা। শতাধিক বছর ধরে জেমস ফিনলে চা কোম্পানির এই সিমেট্রি রক্ষণাবেক্ষণ করছে। ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়ায় চা বাগান প্রতিষ্ঠার পর ১৮৮০ সালে শ্রীমঙ্গলে বৃটিশরা বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু করে। সুদূর বৃটেন থেকে এখানে টি প্ল্যান্টার্সদের আগমন ঘটে। তৎকালীন সময়ে যেসব বৃটিশ এবং তাদের স্ত্রী-পুত্র,স্বজন মারা যান তাদের ডিনস্টন সিমেট্রিতে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। পাহাড়ঘেরা চিরসবুজ চা বাগানের মাঝখানে অবস্থিত এ সিমেট্রিতে বৃটিশদের কবর রয়েছে ৪৬ টি। জেমস ফিনলে টি কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, জেমস ডিনস্টন চা বাগানের এ সিমেট্রিতে সর্বপ্রথম সমাহিত করা হয় রর্বাট রয়বেইলি নামের এক বৃটিশ নাগরিককে। ৩৮ বছর বয়সে ১৮৮৫ সালের ৩০ শে আগষ্ট তিনি ডিনস্টন চা বাগানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৮৯৬ সালের জুন মাসে শিশু উইলিয়াম জন ও ডেভিড সহাবির মৃত্যু হলে তাদের এখানে সমাহিত করা হয়। ১৯১৮ সালের ১৮ই মে জর্জ উইলিয়াম পিটারের সহধর্মিনী মেরি এলিজাবেথ পিটার মারা গেলে তাকে এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। স্ত্রীর মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে ১৯১৯ সালের ২রা অক্টোবর জর্জ উইলিয়াম পিটারও পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। ডিনস্টন সিমেট্রির নীরবতায় পাষাণ কবরের একই আচ্ছাদনে একই কবরে স্ত্রীর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। ১৮৯৬ সালের জুলাই মাসে জাহাজযোগে নিজ দেশে যাওয়ার পথে মারা যান রামসান্টার। ১৯০২ সালের এপ্রিলে পানিতে ডুবে মারা যান এফডাবি-উ এলান। এ দু’জনের মরদেহ পাওয়া যায়নি। স্মৃতি রক্ষার্থে তাদের বন্ধুরা ডিনস্টন সিমেট্রিতে দু’টি প্রতীকী কবর তৈরি করে। ১৯১৯ সালের ২০শে জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলের দারগাঁও চা বাগানে মারা যান অ্যাডওয়ার্ড ওয়ালেস। এদিন ছিল তার ২৫তম জন্মদিন। কলেরায় আক্রান্ত হয়ে ১৯৩৭ সালের শুরুর দিকে হান্ট নামের একজন বৃটিশ নাগরিক তিনিও এই সিমেট্রিতে শায়িত আছেন। ১৯৩৯ সালের বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার একটি বিমান মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন কিংবা অবতরণের সময় শ্রীমঙ্গলের উদনাছড়া চা বাগানে বিধ্বস্ত হয়। এ দুর্ঘটনায় নিহত বিমানের দু’জন চালকের মরদেহ ডিনস্টন সিমেট্রিতে সমাহিত করা হয়। পরে আমেরিকার সামরিক বাহিনী দু’বিমান চালকের মৃতদেহ কবর থেকে উঠিয়ে নিজ দেশে নিয়ে যায়। মসজিদুল আউলিয়া
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি ও চায়ের রাজধানী খ্যাত উপজেলা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পাহাড়ের চূড়ায় নির্মাণ করা হয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ।
তুর্কি নকশায় নির্মিত মসজিদটি দেখতে এবং নামাজ আদায় করতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন অসংখ্য পর্যটক।
মসজিদটির নাম দেয়া হয়েছে মসজিদুল আউলিয়া খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ:)।
জানা যায়, উপমহাদেশ খ্যাত আধ্যাত্মিক সুফি-সাধক খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরীর (রহ:) উত্তরসূরি ছিলেন খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ:)।
খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ:) এর সাহেবজাদা খাজা টিপু সুলতান এ মসজিদটি এখানে নির্মাণ করিয়েছেন।
খাজা মোজাম্মেল হক (রহ:) ফাউন্ডেশনের এখানকার সমন্বয়কারী আরমান খান জানান, শ্রীমঙ্গল সদর থেকে প্রায় ৬-৭ কিলোমিটার দূরে বালিশিরা পাহাড়ের মহাজিরাবাদ এলাকায় এ মসজিদটির অবস্থান।
সমতল থেকে ৭০-৮০ ফুট উপরে পাহাড়ের চূড়ায় স্থাপিত মসজিদটিতে যেতে হয় ১৩৯টি সিঁড়ি পেরিয়ে। প্রায় ১৯ বিঘা জমির ওপর নির্মিত মসজিদের চারদিকেই রয়েছে সবুজ পাহাড়।
আর এসব পাহাড়ে রয়েছে চোখ জুড়ানো সবুজের আবরণ। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে সবুজ চা বাগানও। আরো রয়েছে লেবু ও আনারসের বাগান।
উপরে উঠার সিঁড়িগুলোর দুই পাশে সাদা আর মধ্যে দেয়া হয়েছে লাল রঙ। সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে সাদা আর লাল রঙের মিশ্রণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
তাছাড়া মসজিদের পাশেই রাখা হয়েছে কবরস্থানের জায়গা। রয়েছে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যদের বিশ্রামের জন্য গেস্ট হাউজও।
ভিআইপিদের আসার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে হেলিপ্যাডের। গরিব ও অসহায় মানুষের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করার জন্য রয়েছে একটি চিকিৎসাকেন্দ্র।
মসজিদের ভেতরে লাগানো দৃষ্টিনন্দন একটি ঝাড়বাতি আনা হয়েছে চীন থেকে। নানান জাতের ফুল গাছ লাগিয়ে সাজানো পুরো মসজিদ এলাকার নাম দেয়া হয়েছে জান্নাতুল ফেরদৌস।
দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ৮০০ লোক নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে বলেও আরমান খান জানান। বর্তমানে এ মসজিদের পেশ ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা মো: মুসলেহ্ উদ্দিন।
তিনি আরো বলেন, গত ২৪ নভেম্বর এ মসজিদে বার্ষিক ওরসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা খাজা এনায়েতপুরীর (রহ:) প্রায় আট হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে।
মসজিদটি পরিচালিত হচ্ছে খাজা মোজাম্মেল হক (রহ:) ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে।

1 টি মন্তব্য:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.